রাজশাহী থেকে: দুর্নীতি ও দলীয়করণের জন্য সদ্য বিদায়ী মেয়রকে শান্তিপ্রিয় রাজশাহীবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়ে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে খায়রুজ্জামান লিটনকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে চান রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে সদ্য বিজয়ী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এ জন্য জনগণের সেবক হওয়ার প্রত্যাশা তার।
অর্ধেকেরও বেশি কেন্দ্রের ফল ইতিবাচক থাকায় শনিবার দিনগত মধ্যরাতেই মুখোমুখি হয়ে মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্যই তো রাজশাহীর উন্নয়ন।”
৪৭ হাজার ৩৩২ ভোটে সাবেক মেয়র মহাজোট সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বুলবুলের কাছে পরাজিত হন।
বুলবুল বলেন, “মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরের অত্যাচার, নির্যাতন, অনিয়ম-দুর্নীতি, টাকা লুটপাট, ছিনতাই, মিথ্যাচার, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।”
সরকারের এ ‘ব্যর্থতা’ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করেন বুলবুল।
তিনি বলেন, “এ সরকারের ওপর থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”
শান্তির নগরী রাজশাহীকে অশান্ত করে সন্ত্রাসীদের লালন, দুর্নীতি ও দলীয়করণ লিটনের পরাজয়ের কারণ বলে মনে করেন বুলবুল। এ প্রসঙ্গ তিনি বলেন, “তার (লিটন) কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।”
‘দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত এক মানুষকেই রাজশাহীবাসী এবার নির্বাচিত করেছেন’ দাবি করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বুলবুল ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন।
নির্বাচনের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে লিটন রাজশাহীর উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলো চলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও বুলবুল বলেন, “নতুন পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে সে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবো।”
রাজশাহীকে শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি দেন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত এই নতুন মেয়র।
শিক্ষানগরী রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জামায়াত-শিবির বিভিন্ন অপকর্ম চালালেও ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত এ প্রার্থী বলেন, “গণতন্ত্র সবার জন্য। গণতন্ত্রের সহিষ্ণু পরিবেশের ব্যত্যয় ঘটায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছিল। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে চাই।”
হেফাজতে ইসলাম যেহেতু ১৮ দলীয় জোটের শরিক, তাই রাজনৈতিক দল না হওয়ায় তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না বলে জানান বুলবুল।
মেয়র নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামীর সমর্থনের বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা তো কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তারা ইসলামী ঐক্যজোটের একটা অংশ; যারা আমাদের ১৮ দলীয় জোটের শরিক। তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশ্নই আসে না।”
জয়ের আভাস পেয়ে শনিবার বিকেল থেকেই গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল মাঠে হাজির হন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বুলবুল।
এই হাইস্কুলের মিলনায়তেন স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করার সব সময়টুকু এখানেই ছিলেন তিনি। তবে অন্য মেয়র প্রার্থী কেউ এখানে ছিলেন না।
এদিকে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট নেওয়া হয় এই সিটিতে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে বেসরকারি ফল ঘোষণা শুরু করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার। রাত সোয়া একটায় মোট ১৩৭টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার।
ফলাফলে বুলবুল এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮ এবং লিটন পান ৮৩ হাজার সাতশ ২৬ ভোট পান। মেয়র পদে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের চশমা প্রতীকে ভোট পান মাত্র সাতশ ৯১।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ৭৬ দশমিক নয় শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।