|
নিউজটি পড়া হয়েছে
৬২৫
বার
এককালের প্রমত্তা পদ্মায় পানি নেই, ছোট খালে পরিণত
এককালের প্রমত্তা পদ্মায় পানি নেই। পদ্মা নদী যেন ছোট খাল। পানির অভাবে প্রশস্ত পদ্মা মরে গিয়ে ক্রমেই ছোট থেকে আরো ছোট হয়ে আসছে। জলরাশির পরিবর্তে চারিদিকে শুধু ধু-ধু বালুচর। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর পাদদেশেও এখন বিশাল বালুচর জেগে উঠেছে। এই বালুচরেই সবুজ বিপ্লব ঘটানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষক। খরস্রোতা পদ্মা নদীর এমন করুণ মৃত্যুতে হাহাকার পড়েছে নদী তীরবর্তী মানুষের মনে। পানি না থাকায় কয়েকটি জেলার কৃষকের চাষাবাদ ব্যাহতসহ পরিবেশ ও প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পদ্মা নদীর গড়াই, হিসনা, কালীগঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা নদীগুলো প্রায় পুরোপুরিই শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায় অবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত সরকারের একতরফা পানি প্রত্যাহারের নীতির কারণেই মূলত এই অবস্থা। ৫ মাসের মধ্যে ৩ মাসেই ভারত সরকার ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৯ কিউসেক পানি বেশি দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ বাস্তব চিত্র উল্টো। বাস্তবে পানি না পেয়ে পদ্মা আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে চলতি শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার বুকে দেখা দিয়েছে ধু-ধু বালুচর। এর প্রত্যক্ষ ফল পানির অভাবে দেশের সর্ববৃহৎ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প মারাত্মক হুমকির মুখে। আর পরোক্ষ ফল আরো মারাত্মক। উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়ায় তীব্রতর হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায় দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করার কথা থাকলেও পানির অভাবে ১ লাখ ১৬ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাসহ উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে জিকে সেচ প্রকল্পের ইনটেক চ্যানেল খনন করে চালু করা হয় প্রকল্পটি। পানির অভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি গার্ডারের মধ্যে অর্ধেকই এখন দাঁড়িয়ে আছে ধু-ধু বালুচরে। পর্যবেক্ষকরা এখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মা নদীতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
পিকনিক করছেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ ব্রিজের পাদদেশে। পর্যবেক্ষণে আসা ঢাকা সরকারি বিজ্ঞান কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ-আল রুমন পদ্মা নদী দেখিয়ে আফসোস করে বলেন, এককালের প্রমত্তা পদ্মা আজ মরে গেছে। ফারাক্কার অশুভ প্রভাবেই এমন অবস্থার সৃষ্টি। ১৯১২ সালে যখন এই পদ্মার ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল তখন পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল দুরূহ কাজ। নানা রকম কৌশল নিয়ে পদ্মার বুকে তৈরি হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। আর আজ কালের আবহে পানি শূন্য অবস্থায় বালুচরের ওপর কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ ব্রিজটি। আগামী প্রজন্ম হয়তো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরির কোনো কারণই খুঁজে পাবে না।
|
|
|
|